Fyodor Dostoevsky on angan

ফিওদর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কি ১৮২১ সালের ১১ নভেম্বর রাশিয়ার মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মিখাইল দস্তয়েভস্কি ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং তার মা মারিয়া নেচায়েভা ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ নারী। শৈশব থেকেই দস্তয়েভস্কি সাহিত্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন সম্পর্কে অবগত হন, যা পরবর্তীতে তার সাহিত্যকর্মকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
দস্তয়েভস্কি তার প্রাথমিক শিক্ষা মস্কোতে সম্পন্ন করেন এবং ১৮৩৮ সালে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমিতে ভর্তি হন। তবে, তার মনোযোগ ছিল সাহিত্যের প্রতি, এবং ১৮৪৩ সালে স্নাতক হওয়ার পর তিনি সামরিক জীবন পরিত্যাগ করে লেখালেখি শুরু করেন।


প্রারম্ভিক সাহিত্য জীবন ও গ্রেফতার

দস্তয়েভস্কি তার প্রথম উপন্যাস Poor Folk (১৮৪৬) লিখে ব্যাপক স্বীকৃতি অর্জন করেন, যেখানে রাশিয়ার দরিদ্র মানুষের জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। এই উপন্যাস তাকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
কিন্তু ১৮৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক ধারণা নিয়ে আলোচনাকারী ‘পেত্রাশেভস্কি সার্কেল’-এর সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও পরে তা কমিয়ে চার বছরের সাইবেরিয়ার শ্রমশিবিরে প্রেরণ করা হয়। এই অভিজ্ঞতা তার পরবর্তী লেখাগুলোর মধ্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়, যেখানে কষ্ট, পরিত্রাণ এবং মানবিক মনস্তত্ত্বের জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে।


মূল সাহিত্যকর্ম ও বিষয়বস্তু

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দস্তয়েভস্কি রাশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। তার উপন্যাসগুলোতে নৈতিকতা, মুক্ত ইচ্ছা, বিশ্বাস ও অস্তিত্ববাদের মতো গভীর বিষয় উঠে এসেছে।
১. Crime and Punishment (১৮৬৬) – এক যুবক রাসকলনিকভের নৈতিক সংকট ও আত্মপ্রত্যয়ের কাহিনি।
২. The Idiot (১৮৬৯) – সমাজের মধ্যে একজন নিস্পাপ ও সৎ মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম।
৩. Demons (১৮৭২) – রাশিয়ার রাজনৈতিক চরমপন্থার উত্থান ও তার পরিণতি।
৪. The Brothers Karamazov (১৮৮০) – তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, যেখানে বিশ্বাস, সন্দেহ ও নৈতিকতার সংঘাত বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
দস্তয়েভস্কির রচনায় মানুষের মনের গভীরতম দিকগুলো অনন্যভাবে ফুটে ওঠে। তার উপন্যাসগুলোতে নায়করা প্রায়শই মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগে থাকে এবং অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়, যা তার সাহিত্যকে কালজয়ী করেছে।


ব্যক্তিগত জীবন ও শেষ দিনগুলো

দস্তয়েভস্কি তার জীবদ্দশায় আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন, যার মূল কারণ ছিল তার জুয়ার আসক্তি। তিনি দু’বার বিয়ে করেন—প্রথমে মারিয়া দিমিত্রিভনা ইসায়েভা এবং পরে আন্না গ্রিগোরিয়েভনা স্নিটকিনার সঙ্গে, যিনি তার প্রতি অত্যন্ত অনুগত ছিলেন এবং তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেন।
তিনি মৃগী রোগসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগলেও শেষ পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে যান। ১৮৮১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সেন্ট পিটার্সবার্গে তার মৃত্যু হয়। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল, যা তার বিশাল জনপ্রিয়তার পরিচয় বহন করে।


উত্তরাধিকার

ফিওদর দস্তয়েভস্কির সাহিত্য আজও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। তার লেখার গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও মানব প্রকৃতির অনুসন্ধান দার্শনিকদের পাশাপাশি সাহিত্যপ্রেমীদেরও অনুপ্রাণিত করেছে। দার্শনিক নীৎশে, ফ্রয়েড ও সার্ত্র তার সাহিত্য থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
তার উপন্যাসগুলো বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং চলচ্চিত্র, থিয়েটার ও দর্শনচর্চায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। দস্তয়েভস্কি রয়ে গেছেন এমন এক সাহিত্যিক, যিনি মানব আত্মার গভীরতম অন্তর্দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন এবং যার সাহিত্য আজও পাঠকদের অনুপ্রাণিত করে।