“মা”— এই এক অক্ষরের শব্দটি যেন বিশ্বজগতের সব আলো, সব উষ্ণতা, সব ভালোবাসার এক কেন্দ্রমণি। মা হলেন সেই অস্তিত্ব, যিনি নিজের জীবন দিয়ে গড়ে তোলেন আরেকটি জীবন। আর সেই জীবনকে তিনি শুধু জন্ম দেন না, তিনি তাতে ঢেলে দেন প্রার্থনার মত অদৃশ্য এক আশীর্বাদ।
প্রথম আলোয় যাকে দেখি, তিনিই আমার মা
জন্মের আগেই শুরু হয় মা ও সন্তানের অনন্য বন্ধন। মায়ের হৃদয়ে প্রথম যে স্পন্দন অনুভূত হয়, সেটিই সন্তানের অস্তিত্বের প্রথম চিহ্ন। আর সেই মুহূর্ত থেকে শুরু হয় এক অনন্ত পথচলা—যেখানে মায়ের জীবন, স্বপ্ন, রাতের ঘুম, সকালের শান্তি সবকিছুই সন্তানের মুখের হাসির সাথে জড়িত হয়ে পড়ে।
মায়ের কোল মানেই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।
মায়ের চোখ মানেই ভালোবাসার সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষা।
মায়ের কণ্ঠ মানেই প্রতিদিনের প্রার্থনার ছায়া।
সন্তান কখনো কাঁদে, কখনো হাঁটে, পড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়ায়, আবার ভুল করে—সবসময়ই মা থাকেন পাশে। তাঁর ভালোবাসা এমন এক তরঙ্গ যা কখনো কমে না, বরং সময়ের সাথে গভীর হয়।
মা, তুই যেন এক অনন্ত জলধি—যার গভীরতা মাপতে পারিনি আজও
মা শুধু একজন নারী নন। তিনি প্রকৃতি। তিনি সৃষ্টি। তিনি পৃথিবীর প্রথম গল্পকার, যিনি নিঃশব্দে আমাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় লিখে যান স্নেহ আর ত্যাগের অদৃশ্য কালিতে। তিনি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের আজকে বিসর্জন দেন, হাসিমুখে। নিজের স্বপ্নগুলোকে তুলে রাখেন আলমারির এক কোনে, শুধুমাত্র সন্তানের মুখে হাসি দেখার আশায়।
“মা, আজ তোমার হাতের ভাতটা খুব মনে পড়ছে”—এই একটুখানি বাক্যের ভেতর লুকিয়ে থাকে কতশত বিকেল, কতোশত স্মৃতি, কতোশত আদর।
মায়ের মমতা যেন শরতের নীল আকাশ—বিস্তৃত, নির্মল, অথচ ছোঁয়া যায় না। তাঁর ভালবাসা যেন নদীর মত—অবিরত প্রবাহমান, জীবনের প্রতিটি মোড়ে আমাদের তৃষ্ণা মেটায়।
সন্তানের ভালোবাসা—অন্তরালের এক অদৃশ্য ভাষা
সন্তানের ভালোবাসা অনেক সময় প্রকাশিত হয় না শব্দে, হয় না আচরণে, কিন্তু তা হৃদয়ের গভীরে সযত্নে লুকিয়ে থাকে।
ছোটবেলায় মায়ের আঁচল ধরেই পৃথিবীকে চিনতাম আমরা।
তারপর ধীরে ধীরে হাত ছেড়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাই, কিন্তু মায়ের মুখখানি রয়ে যায় আমাদের পিছনে—দৃশ্যত নয়, কিন্তু অনুভবে, ছায়ায়, আর অন্তরাত্মায়।
বড় হয়ে হয়তো অনেকেই মাকে সময় দিতে পারি না, মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারি না, কিন্তু নিঃসন্দেহে যখন একা থাকি, ক্লান্ত থাকি, ব্যর্থতার ভারে ভেঙে পড়ি—তখন মনে হয়, “ইশ্, মা যদি পাশে থাকতো!”
সেই মুহূর্তে আমরা বুঝি—এই দুনিয়ায় মায়ের বিকল্প নেই, হবেও না।
মা দিবস—একটি ক্ষণিক উপলক্ষ, একটি চিরন্তন ভালোবাসার কথা স্মরণ
হ্যাঁ, মা দিবস একটি প্রতীক। এটি একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়।
মা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই অমূল্য আত্মাকে, যাঁর জন্য আমরা আছি।
এই দিনটি যেন এক অঙ্গীকার—আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই সেই হাতদুটিকে, যারা আমাদের পৃথিবীর সাথে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
আজকের দিনে, আসুন আমরা শুধু মাকে একটি ফুল উপহার দিয়ে দায়িত্ব শেষ না করি।
আসুন আমরা তাঁর পাশে বসি, তাঁর গল্প শুনি, তাঁর চোখে চোখ রাখি, আর মৃদু হেসে বলি—
“মা, তোমার মতো কেউ নেই, কখনো ছিল না, কখনো হবেনা।”
শেষ কথন: মায়ের জন্য কিছু শব্দ
“তুমি আছো বলেই আকাশটা এখনো নীল,
তোমার হাসি মানেই জীবনের চাবিকাঠি।
তুমি কাঁদলে মন ভেঙে পড়ে,
তুমি হাসলে পৃথিবী আলোয় ভরে।
শেয়ার করুন
এমন আরো পড়ুন
এলিফ শাফাকের সাক্ষাৎকার: “আমি নিঃস্বরদের কথাই বলি”
June 17, 2025
প্রশ্ন: ছোটবেলায় পড়া এমন একটি বইয়ের কথা বলুন যা আপনাকে খুব টেনেছিল। কোন দিকটা আপনার
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা কি বদলাচ্ছে? ২০২৫-এর পাঠ-চিত্র
June 12, 2025
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা কি বদলাচ্ছে? রবীন্দ্রনাথের আমলে ‘পাঠক’ শব্দটি ছিল কিছুটা বিশিষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণ। সে
দর্শনের পথিক অথচ ইতিহাসে অনুপস্থিত: বাংলার বিস্মৃত দার্শনিকরা
June 11, 2025
বাংলার দর্শনের ইতিহাস মানেই যেন কয়েকটি পরিচিত নাম—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা পাশ্চাত্যের
নিটশে কি এই প্রজন্মে রিলেভেন্ট?
June 9, 2025
আধুনিক সময়ের প্রতিবাদের ভাষা বদলে গেছে। ব্যানারগুলোতে এখন শুধু “ন্যায়বিচার চাই” লেখা থাকে না —