এক সময়ের জনবহুল ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল গাজা এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে গাজার জনগণ বর্তমানে ইতিহাসের অন্যতম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন।


মানবিক বিপর্যয়
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত গাজায় ৪৫,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯২,০০০। প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫%।


খাদ্য ও পানির সংকট
গাজায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানায়, প্রায় ৯০% জনগণ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পানযোগ্য পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। ইউনিসেফের মতে, অধিকাংশ শিশু নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।


চিকিৎসা ব্যবস্থার ধস
গাজার হাসপাতালগুলো বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪-এ কামাল আদওয়ান হাসপাতালের উপর হামলায় এটি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়ে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হাসপাতাল দখল করে রোগীদের মৃত্যু ও অপ্রয়োজনীয় কষ্টের কারণ হয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।


মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব
গাজার শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতা, বাস্তুচ্যুতি ও ক্ষুধার্ত অবস্থার কারণে মারাত্মক মানসিক আঘাতের শিকার। সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, পাঁচ মাসের সহিংসতায় শিশুরা “অবিরাম মানসিক ক্ষতির” সম্মুখীন হয়েছে


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নীরবতা
যেখানে সাধারণ মানুষ সোচ্চার, সেখানে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও সমাবেশ চললেও, কূটনৈতিক স্তরে গাজা এখনো অবরুদ্ধ। অস্ত্রবিরতি বারবার ব্যর্থ হয়েছে, কারণ রাজনীতি সেখানে মানবিকতার চেয়ে প্রাধান্য পাচ্ছে।


গাজার মানুষ আজ বাঁচতে চায় — শুধুমাত্র বেঁচে থাকার মতো একটি সুযোগ চায়। তাদের চাওয়া কোনো রাজনীতি নয়, বরং একটুকরো নিরাপদ আশ্রয়, একটু খাবার, কিছু ওষুধ, আর ভবিষ্যতের আশা। আমাদের মানবতা আজ পরীক্ষার মুখোমুখি। গাজার পাশে দাঁড়ানো মানেই কেবল একটি অঞ্চল নয়, বরং সমগ্র মানবতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া।