রুমি: প্রেম, মানবতা ও ঈশ্বরের অন্বেষা

March 13, 2025

Angan

জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭-১২৭৩) ছিলেন একজন পারস্যের কবি, সুফি সাধক এবং ইসলামিক দার্শনিক, যিনি তাঁর আধ্যাত্মিক কবিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর লেখা আজও বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।


প্রারম্ভিক জীবন ও পটভূমি

রুমি ১২০৭ সালে বর্তমান আফগানিস্তানের বলখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ইসলামি পণ্ডিত। মঙ্গোল আক্রমণের কারণে তাঁর পরিবার বহু স্থান পরিভ্রমণ করে এবং শেষ পর্যন্ত তুরস্কের কোনিয়া শহরে স্থায়ী হয়।


আধ্যাত্মিক জাগরণ ও সাহিত্যিক অবদান

রুমির জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে শামস তাবরিজ নামক এক সুফি সাধকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর। শামসের প্রভাবেই রুমি আধ্যাত্মিক চিন্তায় গভীরভাবে নিমগ্ন হন এবং কবিতার মাধ্যমে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকেন। তাঁর প্রধান রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
মসনবি-ই-মানবি: সুফিবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়।
দিওয়ান-ই-শামস-ই-তাবরিজি: শামস তাবরিজকে উৎসর্গকৃত গভীর আবেগপূর্ণ কাব্যসংকলন।
ফিহি মা ফিহি: আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক আলোচনা সংবলিত একটি গদ্যগ্রন্থ।


দর্শন ও শৈলী

রুমির কবিতায় প্রেম, ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ, এবং মানুষের আত্মিক মুক্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও আত্মার শুদ্ধতা
সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতা
ঈশ্বরের প্রতি গভীর অনুরাগ
জীবন ও বিশ্বজগতের অন্তর্নিহিত অর্থের সন্ধান


উত্তরাধিকার ও প্রভাব

রুমির মৃত্যু হয় ১২৭৩ সালে, কিন্তু তাঁর রচনা আজও বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে। তাঁর অনুসারীরা ‘মেভলানা তরিকা’ নামে পরিচিত সুফি ঘরানার বিকাশ ঘটান, যার অংশ হিসেবে ‘মেভলেভি ঘূর্ণায়মান দরবেশ’ নামক সুফি নৃত্যের প্রচলন হয়।


উপসংহার

জালালউদ্দিন রুমি ছিলেন কেবল একজন কবি নন, বরং তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিকতার এক জ্যোতির্ময় আলোকবর্তিকা। তাঁর কবিতা ও দার্শনিক চিন্তা আজও বিশ্বব্যাপী পাঠকদের অনুপ্রাণিত করছে, যা তাঁকে সর্বকালের অন্যতম মহান সুফি কবি হিসেবে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে।