শ্রীধর ভেম্বু (Sridhar Vembu) ভারতীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম সেরা নাম। তিনি Zoho Corporation-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সফল একটি সফটওয়্যার কোম্পানি। কিন্তু এই সফলতার পেছনে রয়েছে এক চমকপ্রদ সংগ্রামের কাহিনি।
শৈশব ও শিক্ষাজীবন
শ্রীধর ভেম্বুর জন্ম তামিলনাড়ুর এক সাধারণ পরিবারে। তার পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত, এবং তিনি এক সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে তার উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন【9】।
কর্মজীবনের শুরু
প্রিন্সটনে পড়াশোনা শেষে শ্রীধর ভেম্বু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। তবে তিনি খুব দ্রুতই উপলব্ধি করেন যে, তিনি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজস্ব কিছু করতে চান। তাই ১৯৯৬ সালে, তিনি তার ভাই এবং কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে AdventNet নামে একটি কোম্পানি চালু করেন, যা পরবর্তীতে Zoho Corporation নামে পুনঃব্র্যান্ড করা হয়।
Zoho-এর উত্থান
Zoho মূলত ক্লাউড-ভিত্তিক ব্যবসায়িক সফটওয়্যার তৈরি করে। কোম্পানিটি শুরুতে বড় বড় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, কিন্তু শ্রীধর ভেম্বু কম খরচে উচ্চমানের সফটওয়্যার তৈরি করে একটি নতুন ধারা তৈরি করেন। কোম্পানিটি তার সকল প্রযুক্তি নিজস্বভাবে তৈরি করে এবং বাহ্যিক বিনিয়োগ গ্রহণ না করেই লাভজনক অবস্থানে পৌঁছায়। তার এই আত্মনির্ভরশীলতার নীতিই Zoho-কে অনন্য করে তুলেছে।
গ্রামের প্রতি ভালোবাসা ও প্রত্যাবর্তন
সফলতা অর্জনের পর অনেকেই বিলাসবহুল জীবন বেছে নেন, কিন্তু শ্রীধর ভেম্বু সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ বেছে নেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় তার বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে তামিলনাড়ুর এক প্রত্যন্ত গ্রামে ফিরে আসেন এবং সেখান থেকে Zoho পরিচালনা শুরু করেন। তার লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ ভারতের তরুণদের জন্য উচ্চমানের প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা, যাতে তারা বড় শহরে না গিয়েও সফল হতে পারে।
উদ্যোক্তা দর্শন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শ্রীধর ভেম্বুর মতে, প্রকৃত সাফল্য মানে শুধু ব্যবসার প্রসার নয়, বরং সমাজের উন্নয়নেও অবদান রাখা। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ভারতীয় প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হলে গ্রামীণ শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। Zoho-এর অধীনে তিনি নতুন প্রতিভা গড়ে তুলতে এবং স্বদেশে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
শ্রীধর ভেম্বুর গল্প শুধুমাত্র একজন উদ্যোক্তার সফলতার কাহিনি নয়, বরং এটি আত্মনির্ভরতা, শিক্ষা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি। তার জীবন থেকে প্রমাণ হয়, বড় স্বপ্ন দেখতে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে শুধু প্রতিভাই নয়, প্রয়োজন অদম্য মানসিকতা এবং নিজের শিকড়ের প্রতি ভালোবাসা।