সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ও লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ও লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

শেয়ার করুন

২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই, যিনি তাঁর অনন্য রচনাশৈলী ও দার্শনিক গভীরতার জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ৭১ বছর বয়সী এই লেখককে পুরস্কৃত করা হয়েছে “অ্যাপোক্যালিপটিক সন্ত্রাসের মাঝে শিল্পের শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা” করার জন্য। নোবেল কমিটি তাঁকে “দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপীয় ঐতিহ্যের এক মহান মহাকাব্যিক লেখক” হিসেবে অভিহিত করেছে, যাঁর রচনায় কফকা ও থমাস বার্নহার্ডের প্রভাব স্পষ্ট।


লাসলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছোট শহর জিউলায় জন্মগ্রহণ করেন। এই শহরটি রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং গ্রামীণ পরিবেশের জন্য পরিচিত। জিউলার মতোই একটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চল হলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের প্রথম উপন্যাস সাতানটাঙ্গো (১৯৮৫)-এর প্রেক্ষাপট, যা একটি অবহেলিত গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরে।


ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যিক যাত্রা শুরু হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস সাতানটাঙ্গো দিয়ে, যা ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি একটি অবহেলিত গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরে, যেখানে মানুষের আশা, হতাশা ও বিশ্বাসের সংকট প্রতিফলিত হয়। উপন্যাসটি পরে বিখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলা তার দ্বারা সাত ঘণ্টার একটি চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।


ক্রাসনাহোরকাইয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স, বারন ওয়েনকহেইম’স হোমকামিং, এবং জসোমলে ওদাভান। তাঁর রচনাবলী সাধারণত দীর্ঘ, জটিল বাক্যগঠন ও দার্শনিক গভীরতার জন্য পরিচিত। তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদী ঐতিহ্যকে এশীয় প্রভাবের সঙ্গে মিশিয়ে একটি অনন্য সাহিত্যিক ভাষা সৃষ্টি করেছেন।


ক্রাসনাহোরকাই হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ও তাঁর সরকারের সমালোচক। তিনি ইউক্রেনের প্রতি অরবানের অবস্থানকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর রচনাবলী সাধারণত আধুনিক জীবনের সংকট, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে। তিনি তাঁর সাহিত্যিক কাজের মাধ্যমে সমাজ ও রাজনীতির প্রতি তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।


ক্রাসনাহোরকাই তাঁর সাহিত্যিক কর্মের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার লাভ করেন, যা তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি আরও সুদৃঢ় করে। ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের মাধ্যমে তিনি হাঙ্গেরির দ্বিতীয় সাহিত্যিক হিসেবে এই সম্মান অর্জন করেন; এর আগে ২০০২ সালে ইমরে কের্তেস এই পুরস্কার লাভ করেছিলেন।


লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যিক কর্ম শুধুমাত্র হাঙ্গেরির নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের সাহিত্যাঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। তাঁর রচনাবলী মানব জীবনের সংকট, আশা ও হতাশার চিত্র তুলে ধরে, যা পাঠকদের গভীর চিন্তা ও অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে। ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার তাঁর এই অসাধারণ সাহিত্যিক অবদানের স্বীকৃতি।

আরো পড়ুন

Scroll to Top